
সৈয়দ মাহবুব এ খোদা যিনি দেওয়ানবাগী নামেই বিশ্বের মাঝে পরিচিত। অধিকাংশ মানুষই তাকে ধর্মীয় আলেম বা পথপ্রদর্শক হিসেবে চিনেন। তবে এর বাহিরেও তার আরো অনেক পরিচয় রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি পরিচয় হলো বীর মুক্তিযোদ্ধা।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে দেওয়ানবাগী হুজুরের অবদান চির ভাস্বর হয়ে আছে। বাঙালি জাতির চরম সংকটময় মুহূর্তে তৎকালীন আলেম সমাজের বেশিরভাগ যখন নির্লজ্জভাবে পশ্চিম পাকিস্তানিদের পক্ষ নিল, ঠিক তখনই দেশমাতৃকার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য মাত্র ২২ বছরের তরুণ আলেম সৈয়দ মাহবুব এ খোদা অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন পাক হানাদার বাহিনীর উপর।

তিনি ১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল, রবিবার স্বাধীনতাকামী ৭২জন সঙ্গী সাথিদের নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় স্থাপিত বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম কয়েক মাস তিনি প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে ৩নং সেক্টর ও ‘এস’ ফোর্সের প্রধান মেজর জেনারেল কে এম সফিউল্লাহর তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন রণাঙ্গনে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেন। পরবর্তীকালে তিনি ভারতের হেজামারায় অবস্থিত ৩নং সেক্টর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। সেসময় তিনি ভারতে দু’টি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হেজামারা ক্যাম্পে ১৯ নভেম্বর ঈদুল ফিতরের নামাজে ইমামতি করেন। সেদিন তিনি সমবেত মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেন- “আপনারা সাক্ষী থাকুন। আল্লাহর কসম! আগামী বকরা ঈদের আগে দেশ স্বাধীন হবে। আমি আপনাদের নিয়ে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করব।” মহান আল্লাহর অপার দয়ায় তাঁর পবিত্র মুখ থেকে উৎসারিত এই ঐতিহাসিক ভবিষ্যদ্বাণীর মাত্র ২৭ দিন পর, ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় লাভ করে এবং তিনি ঢাকার তদানীন্তন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ঈদুল আজহার জামাতে ইমামতি করেন। দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান প্রদত্ত বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী এবং তা বাস্তবায়নের ঘটনাটি পরবর্তীতে বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধারা তাদের লিখিত গ্রন্থ ও বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান নবগঠিত ১৬ বেঙ্গল রেজিমেন্টের ধর্মীয় শিক্ষক পদে যোগদান করেন। তদানীন্তন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন রেজিমেন্টে ধর্মীয় শিক্ষকের দায়িত্ব পালনকারী আলেমগণের মধ্যে তিনি ছিলেন শীর্ষস্থানীয়। সেসময় তিনি পবিত্র কুরআন ও হাদিস শরিফের গবেষণায় আত্মত্মনিয়োগ করেন এবং নিয়মিত তাফসির মাহফিল করে একজন প্রজ্ঞাবান মুফাস্স্সিরে কুরআন হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেন।
তথসূত্র: মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফা গ্রন্থ।