মাজার দরবার রক্ষার্থে পির মাশায়েখদের সংগঠন বিশ্ব সূফী সংস্থার চার দফা দাবিসুফি সাধকদের মাজার ও দরবার রক্ষার্থে হামলাকারীদের বিচার ও সুফি স্থাপনার নিরাপত্তা প্রদান সহ চার দফা দাবি জানিয়েছে বিশ্ব সূফী সংস্থা। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি উত্থাপন করেন সংস্থাটির প্রতিনিধিরা। তারা হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আর কোনো সুফি স্থাপনা কিংবা সুফি অনুসারীদের ওপর হামলা হলে পাঁচ হাজার পির মাশায়েখদের সংগঠন বিশ্ব সূফী সংস্থা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করবে এবং দাবি আদায়ে রাজপথে নেমে আসবে। সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব সূফী সংস্থার পক্ষ থেকে বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিশ্ব সূফী সংস্থার কার্যনির্বাহী সদস্য হাসান শাহ সুরেশ্বরী দিপু নূরী। এসময় দেশের প্রসিদ্ধ বিভিন্ন দরবার শরীফ ও মাজার শরীফের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সহ উগ্রবাদীদের হামলায় নিহতদের পরিবারের সদস্য ও আহতরা উপস্থিত ছিলেন। বিগত ছয় মাসে ৮০টি মাজার ও দরবার ভাংচুর হয়েছে উল্লেখ করে হাসান শাহ সুরেশ্বরী দিপু নূরী বলেন, আমাদের দেশে সুদূর আরব ও পারস্য থেকে সূফী ও আওলিয়ায়ে কেরাম এসে ইসলাম প্রচার করেছেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, যেই সুফিদের মাধ্যমে আমরা ইসলাম পেলাম, তাঁদের দরবার ও মাজার শরীফ ভাংচুর লুটপাটসহ অনুসারীদের হত্যা করা হচ্ছে এবং নির্মম অত্যাচার ও অমানবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব সূফী সংস্থার পক্ষ থেকে চারটি সুনির্দিষ্ট দাবি উত্থাপন করা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, অবিলম্বে দেশের সকল মাজার শরীফ ও দরবার শরীফে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং এসব দরবার ও মাজারসমূহের খাদেম ও ভক্তদের হত্যা এবং জখমের ঘটনা বিচারবিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দোষী, মদদদাতা ও পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করা। অগ্রাধিকারভিত্তিতে দেশের সকল সূফী দরবার, খানকা, মজলিশ, আস্তানা, আখড়া, মাজার শরীফ সহ সকল সূফী স্থাপনা ও নিদর্শনের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সুফি-বাউল-ফকির-দরবেশদের নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে নিজ নিজ আচার-অনুষ্ঠান ও রীতি-নীতি পালনের নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করতে বাংলাদেশ পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি, আনসার সহ সকল আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সামরিক বাহিনীর প্রতি নির্বাহী আদেশ প্রদান। এছাড়া, ধর্মীয় সম্পৃতি, সহাবস্থান ও দেশের শান্তি-শৃংখলা রক্ষার স্বার্থে কোনো ওয়াজ মাহফিলে কিংবা মসজিদের খুৎবায় যেন সূফীবাদ, মাজার, দরবার, অলীআল্লাহ বিরোধী বক্তব্য দেওয়া না হয় সেজন্য দেশের সকল মসজিদ, কওমী মাদ্রাসা ও আলীয়া মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ধর্ম মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি ও প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে নির্দেশ প্রদান করার দাবি তোলা হয়। পাশাপাশি ধ্বংসযজ্ঞের শিকার সকল দরবার, মাজারের অর্থনৈতিক ক্ষতি নিরূপণ করে ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং যারা নিহত ও আহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানানো হয়েছে এই সংবাদ সম্মেলনে। হাসান শাহ সুরেশ্বরী বলেন, দেশে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা ও সকল মত-পথের সহাবস্থান নিশ্চিতের স্বার্থে এই দাবিগুলো বর্তমান সরকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা বিশ্ব সূফী সংস্থার পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আজকের পর থেকে সূফী অনুসারীগণ ও সূফী স্থাপনাসমূহের ওপর আবার কোনো আঘাত এলে আমরা বিনা প্রতিরোধে বসে থাকবো না। ৫ হাজার দরবার ও মাজার শরীফের অনুসারি ও খাদেমগণ সম্মিলিতভাবে এই হামলা প্রতিরোধ করবে এবং দাবি আদায়ের জন্য রাজপথে নেমে আসবে।সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্লোবাল সূফী অর্গানাইজেশন বাংলাদেশের সূফীয়ায়ে কেরাম ও আউলিয়ায়ে কেরামের প্রতিষ্ঠিত দরবার শরীফ, খানকা শরীফ ও আস্তানাসমুহের কর্ণধার এবং অলী-দরবেশ-সাধকগণের মাজার শরীফের তত্ত্বাবধায়কদের সমন্বয়ে গঠিত একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। বর্তমানে সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা ৫ হাজারের অধিক। এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য হলো, সমাজে সকল শ্রেণির মানুষের মাঝে সূফীবাদের শিক্ষা তথা আত্মশুদ্ধি অর্জন ও একাগ্রচিত্ত ইবাদতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের বিদ্যা পৌঁছে দেওয়া। পাশাপাশি পির-মাশায়েখ ও সুফিয়ায়ে কেরামের ওপর জুলুম-নির্যাতন, তাদের দরবার শরীফ, মাজার শরীফ ও আস্তানায় উগ্রবাদী ধর্মান্ধগোষ্ঠীর হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও অনুসারীদেরকে হত্যার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলে সূফীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব সূফী সংস্থার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পর্ষদের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আহসানুল হাদী, আফতাব আলম জিলানী, নাছির উদ্দিন চিশতী, মাওলানা তৌহিদুল ইসলাম চিশতি, ড. আলাউদ্দিন আলন, লুৎফুল্লাহিল মাজিদ পরাগ, মুখলেছুর রহমান বাবু, শামসুজ্জামান চৌধুরী সজিব, সালাউদ্দিন সিকদার সহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া দেওয়ানবাগ শরীফ, মাইজভান্ডার শরীফ, সুরেশ্বর দরবার শরীফ, মুর্শিদপুর দরবার শরীফ, মোহাম্মদীয়া দরবার শরীফ, সাইফিয়া দরবার শরীফ, রেজভিয়া দরবার শরীফ, দৌলতবাড়ি দরবার, মাছিয়াতা দরবার, খান্দুরা দরবার, বখশিয়া দরবার, বৈরাবর দরবার, ঝিটকা শরীফ সহ কাদেরীয়া, চিশতীয়া, মোজাদ্দেদিয়া, নক্সবন্দিয়া সিলসিলার দরবার শরীফের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।