ইসলামে কবর জিয়ারত একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল, যা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সুন্নত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এটি আত্মশুদ্ধি, মরণকে স্মরণ করা এবং মৃতদের জন্য দোয়া করার একটি মাধ্যম। কবর জিয়ারতের গুরুত্ব সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
কবর জিয়ারতের গুরুত্ব ও ফজিলত
১. রাসুল (সা.) কবর জিয়ারতের অনুমতি দিয়েছেন হাদিসে এসেছে,রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:”আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু এখন তোমরা কবর জিয়ারত করতে পারো। কেননা, এটি তোমাদেরকে আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।” (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৫৬৯)
এর মাধ্যমে বোঝা যায়, কবর জিয়ারত করলে মানুষের হৃদয়ে নম্রতা আসে এবং পরকালের প্রস্তুতির জন্য উদ্বুদ্ধ হয়।
২. নবীজি (সা.) নিজেও কবর জিয়ারত করতেন
হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন: “রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রাতে বাকী গোরস্থানে (মদিনার কবরস্থান) যেতেন এবং মৃতদের জন্য দোয়া করতেন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২৫৬)
কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্য ও করণীয়
১. মৃতদের জন্য দোয়া করা
কবরস্থানে গিয়ে মৃতদের জন্য দোয়া করা উচিত। রাসুল (সা.) আমাদের এই দোয়া শিখিয়েছেন:”আসসালামু আলাইকম আহলাদ দিয়ারি মিনাল মুমিনিনা ওয়াল মুসলিমিন। ওয়া ইন্না ইনশা-আল্লাহু বিকুম লাহিকুন। ইয়ারহামুল্লাহুল মুস্তাকদিমিনা মিননা ওয়াল মুস্তাখিরিন। নাসআলুল্লাহা লানা ওয়ালাকুমুল আফিয়াহ।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৭৪)
২. মৃতদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা
কবরস্থানে গেলে দুনিয়ার ক্ষণস্থায়িত্ব উপলব্ধি করা যায় এবং পরকালের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার তাগিদ আসে।
৩. কবরের পাশে দাঁড়িয়ে নম্র ও বিনম্র থাকা
কবরের ওপর বসা, চলাফেরা করা বা কবরবাসীদের কষ্ট দেওয়া ইসলামসম্মত নয়।
কবর জিয়ারতের দোয়া
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার কবরবাসীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় যে দোয়াটি তিনি পাঠ করেন তা হলো—السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالأَثَرِ
বাংলা উচ্চারণ : ‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর; ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম, আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আছার।’
অর্থ : হে কবরবাসী! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের এবং তোমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের আগে তোমরা কবরে গেছ এবং আমরা পরে আসছি। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১০৫৩)
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি কবর জিয়ারতে গিয়ে বলেন,السَّلامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤمِنينَ وإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاحِقُونَ
বাংলা উচ্চারণ : আসসালামু আলাইকুম দার ক্বাওমিম মুউমিনি না ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুনা।
অর্থ : মুমিন ঘরবাসীর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ, আমরা আপনাদের সঙ্গে মিলিত হবো। (সহিহ মুসলিম : ২৪৯)
কবর জিয়ারতের নিয়ম
কবরস্থানে সর্বপ্রথম জিয়ারতের দোয়া পড়া। এরপর কবরবাসীর ইসালে সওয়াবের নিয়তে দরুদ শরিফ ও বিভিন্ন সুরা ইত্যাদি আদায় করা। মৃতের বা কবরবাসীর মাগফিরাতের জন্য দোয়া করা।
হাদিসে কবর জিয়ারতের ক্ষেত্রে কিছু সুরার বিশেষ ফজিলতের কথা উল্লেখ আছে। এমনকি দরুদ শরিফের ফজিলতের কথাও রয়েছে। তাই দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা, সুরা ইখলাস, আয়াতুল কুরসি ও অন্য যেসব সুরা সহজ মনে হয়, সেগুলো আদায় করা।
কবর জিয়ারত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যম। এটি আমাদের মৃত্যু ও পরকাল স্মরণ করিয়ে দেয় এবং মৃত আত্মীয়-স্বজনদের জন্য দোয়া করার সুযোগ করে দেয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবর জিয়ারতের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করার তৌফিক দান করুন, আমিন।